বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পুরনো ঐতিহ্য ফেরাতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম,বীর প্রতীক।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে চট্টগ্রামের ‘খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন’ এর অনুদান গ্রহণ ও মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কাদের শাসন করার কথা, বিগত দিনে কারা শাসন করেছে। অথচ এটা ব্যবসায়ীদের সংগঠন। সেজন্য বাণিজ্যে কোথায় বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা তা ব্যবসায়ীদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। কোন ব্যক্তি বা সরকারের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবসা বাণিজ্যে আমুল সংস্কার হয়ে যাবে।
উন্নয়নে অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা-মাওয়া রোড কি আপনারা দেখেছেন ? ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের পরিস্থিতি আমাদের উন্নয়নের কোন গভীর খাদে নিপতিত করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। এছাড়াও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি টানেল কার নির্দেশে, কাদের জন্য করা হয়েছে তা যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি, তবে অনেক কিছুই জানতে পারবো।
এটাই সংস্কারের শেষ সুযোগ উল্লেখ করে ফারুক ই আজম বলেন, আমরা অনেকদিন ক্ষমতায় থাকতে আসিনি, পরিবর্তন করতে এসেছি। আমরা যদি পরিবর্তন করে দিয়ে যেতে না পারি, তবে এই দেশ শেষ হয়ে যাবে। কি চাকরিজীবী, কি পেশাজীবী, আমরা যদি মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই তবে এ অগ্রযাত্রায় প্রত্যেককে সহযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের হৃদস্পন্দনে রয়েছে বাণিজ্য। আমি আগেই বলেছি, বাণিজ্য আমাদের ধারণ করে। আমাদের চট্টগ্রামবাসীর মানসে ব্যবসা। আমরা উদ্যেক্তা, অভিযাত্রী। পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে, প্রান্তরে, আমরাই অভিযান শুরু করেছি। এটি আজকের বিষয় নয়। বহুকাল আগের বিষয়। আমরা কিভাবে বিবর্তিত হলাম, সেটা আমাদেরকে বিবেচনায় নিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের পরামর্শ চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা চাইবেন না, নির্দেশ দিবেন। কোনটা করলে দেশের কি উপকার হবে, সেই সংস্কারগুলো করার জন্যই এখানে আসছি। পরিবর্তন-সংস্কার সবজায়গায় আন্তরিকভাবেই করতে চাই এবং সেটাতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। সমস্যা যেখানে হবে, সেই সমস্যায় যারা নিপতিত আছেন, তাদের কাছ থেকেই সেই সুপারিশটা আসতে হবে। আমরা কারো সাথে, কোনো বিষয় নিয়ে কোনো বিদ্বেষ নেই।
উপদেষ্টা আরও বলেন, খাতুনগঞ্জের ঐতিহ্য আমাদের ফেরাতেই হবে। বৃষ্টি-বন্যায় খাতুনগঞ্জ অর্ধেক ডুবে যায়। সেখানে বাণিজ্য উপযোগী হয় না। আজকে থেকে একশত বছর আগে যেরকম ছিলো, এখনও কেন সেরকম থাকবে ? কখনও কি আমরা প্রশ্ন করেছি ? খাতুনগঞ্জে পণ্য পরিবাহী গাড়িগুলো কিভাবে যেতে পারে, কিভাবে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলো দিলে বাস্তবিকভাবে ব্যয় সংকুচিত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা কেউ বিছিন্ন নই। সবাইকে সম্মেলিতভাবে এটি গড়ে তুলতে হবে। কারো উপরে দায় চাপিয়ে নয়। কিভাবে পরিবর্তন হবে, তা নিয়ে আপনারা ভাবেন। আপনাদের ভাবনার সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে চাই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সাধারণ সম্পাদক ছগীর আহম্মেদ, উপদেষ্টা তৈয়বুর রহমান, সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমদ রশিদ আমু সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।